ক্যালিফোর্নিয়ার লস অলিভসে প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের দি নেভারল্যান্ড র্যাঞ্চ নামে বাড়িটি অবশেষে কিনে নিয়েছেন তারই এক সাবেক বন্ধু রন বার্কলে। মি. বার্কলের একজন মুখপাত্র এই তথ্য জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত রেকর্ড ও চুক্তির সাথে জড়িত তিন ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এজন্য মি. বার্কলে ২২ মিলিয়ন পাউন্ড বা দুই কোটি বিশ লাখ ডলার পরিশোধ করেছেন।
দুই হাজার ৭০০ একর (১১ শ’ হেক্টর) জমির উপর বাড়িটি নির্মিত। ২০১৫ সালে বাড়িটির দাম উঠেছিল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই দামের তুলনায় বাড়িটি ন্যায্য দামের চার ভাগের একভাগ দামে বিক্রি করা হয়েছে। সবশেষ গত বছরও বাড়িটির দাম উঠেছিল ৩১ মিলিয়ন ডলার।
মাইকেল জ্যাকসন ১৯৮৭ সালে এই অট্টালিকাটি কিনেছিলেন সাড়ে ১৯ মিলিয়ন ডলারে। তখন এই টাকা পরিশোধ করতে তাকে বহু কষ্ট করতে হয়েছে।
১৯৮৭ সালে জ্যাকসন নিজে ১ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারে বাড়িটি কিনেছিলেন। খ্যাতির চূড়ায় থাকার সময়ে তিনি পরিবার নিয়ে এই বাড়িতেই বসবাস করতেন। বাড়িটি কেনার পর তিনি সেটিকে বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। সেখানে শিশুদের নানা ধরনের খেলাধূলার ব্যবস্থা এবং একটি চিড়িয়াখানা আছে।
পপসম্রাট বাড়িটি তিল তিল করে মনের মত করে করে গড়ে তোলেছিলেন। এই কম্পাউন্ডে রয়েছে- রেললাইন, অগ্নিসহায়তা কেন্দ্র ও বিস্তীর্ণ বাগান। একটি চিড়িয়াখানাও ছিল, যেখানে শিশু-কিশোররা আসা যাওয়া করত। পরে জেএম ব্যারির পিটার প্যান গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে এটিকে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রে রূপ দেন শিল্পি। পাশাপাশি এখানে বসবাসও করতেন। কয়েক বছর আগে বাড়িটির নাম পাল্টে ‘সাইকামোর ভ্যালি র্যাঞ্চ’ রাখা হয়।
মূল ভবনে ৬টি শয়ন ঘর, ৯টি বাথরুম, একটি বড় বেডরুম ও দুটি বড় টয়লেটসহ একটি চিলেকোঠা রয়েছে। ভেতরে লেক, সুইমিং পুলসহ খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে একটি বিশাল থিয়েটার হল।
১৯৮২ সালে বাড়িটির স্থাপত্যশৈলীর নকশা করেছিলেন রবার্ট অলটেভার্স। মাইকেল জ্যাকসন বাড়িটিতে অবসরে একান্তে সময় কাটাতেন। এই বাড়িতেই তিনি শিশু যৌন নির্যাতন করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই বাড়িতে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ এনে তদন্ত করা করা হয়।
‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রচারের পর মাইকেল জ্যাকসনকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এটি একটি ব্রিটিশ-আমেরিকান ডকুমেন্টারি ফিল্ম। তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা ড্যান রিড। এতে জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। তবে মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার তাদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ২০০৫ সালে ওই মামলা থেকে খালাস পান মাইকেল জ্যাকসন। এ ঘটনার পর তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর কখনো নেভারল্যান্ডে ফিরে যাবেন না।
২০০৯ সালে ৫০ বছর বয়সে অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরই বিক্রির সিদ্ধান্ত হয় বিশাল এই বাড়িটি।
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any link in the comment Box