অঙ্কের খাতায় ‘এক্স’ দিয়ে অজ্ঞাত রাশি বোঝানো হলেও, সিনেমার পর্দায় ব্যাপারটা তা নয়। ‘এক্স’ সেখানে বিশেষ এক ধরনের ছবির চিহ্ন! পর্নোগ্রাফি। কিন্তু ‘এক্স’-এর মার্কা দিয়ে কেন বোঝানো হয় মার্কামারা সেইসব ছবিকে?
খোলামেলা পর্ন ছবিতে ‘এক্স’ লেখা হয় ‘এক্সপ্লিসিট’ শব্দের সংক্ষেপিত রূপ হিসেবে। এর আড়ালে রয়েছে ‘এমপা’ বা মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা-র করা ছবির শ্রেণিবিভাজন। ১৯৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থা ছবির চার ধরনের বিভাগ চালু করে। ‘জি’ (জেনারেল), ‘এম’ (ম্যাচিওর), ‘আর’ (রেস্ট্রিক্টেড) এবং ‘এক্স’ (এক্সপ্লিসিট)। পরবর্তীতে এই বিভাজন বদলালেও শুরুটা ছিল এমনই। মজার কথা হল, এখানে ‘এক্সপ্লিসিট’ কিন্তু কেবল যৌনতায় আবদ্ধ ছিল না। যে কোনও ধরনের ভায়োলেন্সের ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়িকে বোঝাতেই এই ‘এক্স’কে বোঝানো হতো।
কিন্তু এইখানেই রয়েছে একটি মজার ব্যাপার। এই বিভাগগুলির মধ্যে সব ক’টিরই ‘ট্রেডমার্ক’ ছিল। অর্থাৎ, কোনও প্রযোজক বা পরিচালক নিজের ইচ্ছেমতো কোনও বিভাগের মার্কা তাঁর ছবিতে ব্যবহার করতে পারতেন না। মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন ছবিটি ভাল করে দেখে, কোন রেটিং তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা স্থির করে, সেই মতো চিহ্ন নির্ধারণ করত। তার পর সেই চিহ্ন (‘জি’, ‘এম’ বা ‘আর’) ছবিতে ব্যবহার করা হত। এই পদ্ধতির একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ‘এক্স’। ছবিতে ‘এক্স’ লিখতে ‘এমপা’-র অনুমোদন দরকার ছিল না।
ব্যস, ছবির আকর্ষণ বাড়াতে অনেকে নিজে থেকেই ছবিতে ‘এক্স’ চিহ্ন জুড়ে দিতে লাগল! দর্শকদেরও ‘দুষ্টু’ ছবি শনাক্তকরণে সুবিধে হল, খোলামেলা উষ্ণ দৃশ্যের লোভে ঢল পড়ে গেল। এর পর আরও বেশি দর্শকের লোভে অনেকে তাঁর ছবিতে দেদার বাড়িয়ে দিতে থাকলেন ‘এক্স’-এর সংখ্যা। কেউ দুটো দিলেন, তো কেউ তিনটে। যেন যত বেশি ‘এক্স’, তত বেশি সেক্স! আজও চালু ধারণা তেমনই রয়ে গিয়েছে— পর্ন কতটা কড়া, তা বুঝিয়ে দেয় ‘এক্স’-এর সংখ্যা।
অথচ আদপে, এমন চলতি ধারার আড়ালে কোনও স্বীকৃত কারণ নেই। মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে ‘এক্সএক্সএক্স’ বলে কিচ্ছু নেই, কোনওদিন ছিলও না। নেহাতই বিপণনের কৌশল হিসেবে জন্ম নিয়ে আবিশ্ব ছড়িয়ে গিয়েছে সংকেতবাহী তিনটি দুষ্টু ‘এক্স’। কেউ কেউ তো তিনটিকে পেরিয়ে আরও এগিয়ে গিয়েছেন!
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any link in the comment Box