Like us on Facebook

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

Monday, November 16, 2020

সৈয়দপুর জেলা ও শতবর্ষী স্কুলের ইতিহাস।

সৈয়দপুর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার একটি শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের তৃতীয় বৃহত্তম শহর (রংপুর প্রথম ও দিনাজপুর দ্বিতীয়)। এটি সৈয়দপুর উপজেলার সদরদপ্তর ও জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে খরখড়িয়া নদীর পূর্ব তীরে সমতল এলাকাতে অবস্থিত। সৈয়দপুর শহর এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১৩৩,৪৩৩ জন। জনসংখ্যার বিচারে এটি বাংলাদেশের ৩২তম বৃহত্তম শহর। রংপুর বিভাগের একমাত্র বিমানবন্দরটি এখানে অবস্থিত হওয়ায় একে উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ যোগযোগ কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এন৫, যা এশিয়ান মহাসড়কের অংশ এ শহরের মধ্য দিয়ে গেছে।
নামকরণ
সৈয়দপুর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছুই জানা যায়নি। এটা অনেক আগে থেকেই জানা যায় যে ভারতের কোচ বিহারের একটি সৈয়দ পরিবার এসে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার শুরু করে। সাধারণত এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই সৈয়দ পরিবারের নামে এই সৈয়দপুর নামটি নামকরণ করা হয়েছে।

ইতিহাস
সৈয়দপুরের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন জানা যায় না। পূর্বে এটি কামরুপ রাজ্যের অধীন ছিল। আলাউদ্দিন সৈয়দ হোসেন শাহ কামরূপ অভিযানের সময় সৈয়দপুরের নিকটে কেলাবাড়ীর হাটে একটি দুর্গ নির্মাণ করে সেখান থেকে কামরুপ অভিযান পরিচালনা করেন। ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কাছাকাছি সৈয়দপুর শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯১৫ সালে রেলওয়ে স্টেশনের পাশে সৈয়দপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে সৈয়দপুর পৌরসভা গঠিত হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় অনেক বিহারী শরণার্থী সৈয়দপুরে চলে আসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ বিহারিগণ বাঙ্গালিদের উপর হামলা চালায়, যাতে কয়েকজন বাঙালি নিহত হন। ৭ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কিছু নিরহ বাঙালিকে হত্যা করে। ২৩ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩৫০ জন বাঙালিকে ধরে নিয়ে গোলাহাটে গণহত্যা করে।

শিক্ষা
সৈয়দপুরের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, যা ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সৈয়দপুরকে নীলফমারী জেলার শিক্ষার শহরও বলা হয়। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যা জেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে ইলেক্ট্রিক্যাল, কম্পিউটার, ব্যবসায় প্রশাসনসহ প্রধান বিষয়সমূহে স্নাতক ও স্নাকোত্তর কোর্স চালু আছে। আরও ৩টি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাকোত্তর কোর্স চালু আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহ দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ হল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সৈয়দপুর, সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল, সৈয়দপুর সরকারি কলেজ, সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল-উলুম মাদ্রাসা, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আল ফারুক একাডেমি। এছাড়া আরও প্রায় ৯টি কলেজ, ৫০টির উপরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কিন্ডারগার্ডেন রয়েছে।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সৈয়দপুরের শিক্ষার হার ৬৩.৯%, যার মধ্যে নারী শিক্ষার হার ৬০% এবং পুরুষ শিক্ষার হার ৬৫.৮%। ১৯৯১ সালে এ শিক্ষার হার ছিল ৫৭.৮%। 

ইংরেজ শাসনামলে সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের আগমন ঘটে এই শহরে। এক ইংরেজ সাহেবকে প্রধান করে ১৮৮৬ সালে সর্বপ্রথম এমই স্কুল নামে বর্তমানে রেলওয়ে একাউন্টস অফিসের স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।

স্কুলের ছাত্র সংখ্যা বাড়ার কারণে সৈয়দপুর ও আশ-পাশের বিদ্যুত্সাহী ব্যক্তিদের মধ্যে মরহুম হেদায়েতুল্লাহ সরকার, রহিম উদ্দিন সরকার, পরমতুল্লাহ সরকার, কোফাতুল্লাহ সরকার, হাজী জামাল উদ্দিন আহমেদ, কাজীতুল্যা চৌধুরী এবং মরহুম জিয়ারতুল্লাহ আহমদ জমি ও অর্থ দান করে স্কুল প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। দেশ বিভাগের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন চলে যাওয়ায় তাদের নাম পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় লোকজন ও কমিটির তরফ থেকে সে সময় সংগৃহিত অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার টাকা। তত্কালীন সরকারের শিক্ষা বিভাগ ১৪ হাজার টাকা ও রেলওয়ে বিভাগ ১০ হাজার টাকা এককালীন দান করে। রেলওয়ে এলাকা বাদ দিয়ে শহরের নিয়ামতপুর মৌজায় ৫ একর ৩৪ শতক পছন্দসই জায়গা স্কুলের জন্য নির্বাচন করা হয় এবং একটি ইসেপেড স্কুল বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। দক্ষিণমুখী স্কুল ভবনটি আজও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর ধারক ও বাহক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।

এভাবেই ১৮৮৬ সালের এমই স্কুলটি ১৯০৬ সালে সৈয়দপুর হাই ইংলিশ স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯০৬ সালে স্কুল ভবনটি নতুনভাবে নির্মাণের পর যদুনাথ ঘোষ এমএকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর স্কুলের নাম হয় সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয় যা পরবর্তীতে সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।

Share:

0 comments:

Post a Comment

Please do not enter any link in the comment Box

Blog Archive

Definition List

Unordered List

Support

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner