সাধারণ মানুষকে হয়রানি, সন্ত্রাস, টেন্ডার-চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। আর এ জন্য তারা গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। ক্ষমতা পেয়েই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে মারধরের শিকার হন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর গাড়িটি থেকে কয়েকজন ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। জানা যায়, গাড়িতে তখন বসা ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম।
এ ঘটনায় মামলা হয়। এরপর হাজি সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলামকে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৮টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার। পাওয়া যায় নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধান।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার কারণেই বেসামাল আচরণ করছেন কাউন্সিলররা।
মমিনুল হক সাঈদ, গত মেয়াদে তিনি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এলাকায় গড়েছিলেন একক আধিপত্য। জড়িয়ে পড়েন ক্যাসিনো–বাণিজ্যে। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব খাটিয়ে বনে যান বিভিন্ন ক্লাবের নেতা।
কাউন্সিলর হলেও তিনি বোর্ড সভায় নিয়মিত যেতেন না। এমনকি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অসংখ্যবার বিদেশে যান। র্যাবের ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পরপরই মমিনুল হক সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান।
গত মেয়াদে দক্ষিণ সিটির আরেক কাউন্সিলর মঈনুল হক মঞ্জু। চাঁদাবাজির মামলায় ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। চাঁদাবাজি ছাড়াও মঞ্জুর বিরুদ্ধে ভূমি দখল, মাদকের ব্যবসা এবং জুয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে।
এবারের সিটি নির্বাচনে নিজেদের পরিচ্ছন্ন দাবি করে জয়ী হয়েছেন সব কাউন্সিলর। কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে তাদের অনেকেই এখন বেপরোয়া। কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই এখন এলাকার লাভজনক খাত মার্কেট কমিটি, স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটি, বর্জ্য টেন্ডার, টেম্পু-অটো স্ট্যান্ড দখলে নিয়েছেন। এছাড়াও এলাকায় চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু থেমে থাকলেও কিছু কিছু কাউন্সিলরের বেপরোয়া ভাব থামেনি।
দক্ষিণ ঢাকার মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসে জানান, কাউন্সিলরদের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নেবে না সিটি করপোরেশন। অপরাধ করলে পেতে হবে শাস্তি। কাউন্সিলরদের বেপরোয়া মনোভাব থেকে বেরিয়ে জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান মেয়র তাপস।
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any link in the comment Box