এ এক প্রতিশ্রুতি পূরণেরই গল্প। সাতক্ষীরার আশাশুনিতে দায়িত্ব পালনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশের এএসআই শাহ জামালের লাশ দাফন করতে গিয়ে জেলা পুলিশের সদ্যসরা স্বচক্ষে দেখেন, ওই এএসআইয়ের বাবা–মা গোয়ালঘরে থাকেন।পুলিশে ১৭ বছর চাকরি করলেও জামাল কোনো বাড়িঘর–জায়গাজমি করতে পারেননি। জামালের মা–বাবাকে সেদিনই বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কথা দেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। নবনির্মিত বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে ‘প্রতিশ্রুতি’। যশোরের শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।
১৭ বছর পুলিশের চাকরিজীবনে বসবাসযোগ্য একটি ঘরও নির্মাণ করতে পারেননি শাহ জামাল। এরপরও দালান বা পাকা বাড়ি দূরের কথা, পুরোনো বাড়িঘর মজবুত করে মেরামতই করতে পারেননি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহ জামাল (৩৮)। সাতক্ষীরার আশাশুনি থানায় কর্মরত এই পুলিশ কর্মকর্তা গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে বুধহাটা বাজারে দায়িত্ব পালন শেষে আশাশুনি থানায় যাওয়ার পথে চাপড়া সেতু এলাকায় ট্রাকে রাখা বাঁশ পেটে ঢুকে নিহত হন। জেলা পুলিশের সদস্যরা যশোরের শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে তাঁর গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করতে গিয়ে দেখেন, এই এএসআইয়ের পরিবারের করুণ অবস্থা। তাঁর মা–বাবা বাস করেন গোয়ালঘরের এক পাশে।
![]() |
নিহত এএসআই শাহ জামাল সংগৃহীত |
এ মানবেতর পরিস্থিতি জানার পর সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান নিহত এএসআই জামালের বাবা-মাকে একটা ছোট বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কথা দেন। সেই স্বপ্ন অবশেষে পূরণ করতে পেরেছেন তিনি। শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে তিনি শাহ জামালের বাবা-মাকে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকাবাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। বেদনার নীলরঙা বাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতিশ্রুতি’। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার নিজে উপস্থিত থেকে জামালের বাবা-মায়ের হাতে নবনির্মিত বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আশাশুনি থানায় কর্মরত অবস্থায় শাহ জামাল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁর মা–বাবা। তাঁদের বাসযোগ্য কোনো বাড়িও ছিল না। এএসআই জামালের পরিবার বাস করত একটি ভাঙা বাড়িতে। তাঁর মা–বাবা থাকতেন গোয়ালঘরের এক পাশে। সবকিছু জানার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, শাহ জামালের বাবা-মাকে বাসযোগ্য একটি ছোট বাড়ি করে দেবেন। সেই অনুযায়ী তিনি কাজ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাড়ির চাবি শাহ জামালের বাবা সুলতান বিশ্বাসের কাছে হস্তান্তর করেছেন তিনি।
নিহত এএসআই শাহ জামালের বাবা সুলতান বিশ্বাস বলেন, গোয়ালঘরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী বসবাস করতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে মারা যাওয়ার পরে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানান। জামালের মা হাওয়া বিবি বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমি পাগলপ্রায়। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার একজন মানবিক মানুষ। আমি মায়ের মতো তাঁর সফলতা কামনা করি।’
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any link in the comment Box