
ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে সেই কবে, ১৫ জ্যৈষ্ঠ। এরপর কেটে গেল দুই মাস। তবু বঙ্গোপসাগর ও উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদীতে মিলছিল না ইলিশের দেখা। ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে-ব্যবসায়ীদের বলতে গেলে খালি ট্রলার নিয়েই ফিরতে হচ্ছিল। এতে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। কারণ, ধারকর্জ নিয়ে জাল ও ট্রলার তৈরি করে তাঁরা ইলিশ ধরতে গিয়ে প্রতিনিয়ত শূন্য হাতে ফিরছিলেন।অবশেষে বঙ্গোপসাগর থেকে বড় বড় রূপালি ইলিশ ধরে কূলে ফিরতে শুরু করেছে জেলেরা। সাগরে মাছ ধরার উপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই থেকে ফের মাছ ধরা শুরু হয়। বঙ্গোপসাগরে এখন মাছের প্রাচুর্য থাকায় ফিশিং বোটগুলো সপ্তাহ পার না হতেই মাছ বোঝাই করে ঘাটে ফিরে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার একদিনেই কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসেছে শতাধিক টন মাছ। কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গমনকারী বোটগুলো মাছ ধরে ফিরতে শুরু করায় গত কয়েক দিন ধরে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট এখন প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকছে। বাংলাদেশ ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) আওতাধীন কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম গত রাতে আজাদীকে বলেন, গত কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলিশ এসেছে আজই (মঙ্গলবার)। এখনো ইলিশ বোঝাই ট্রলার আসা অব্যাহত রয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর সোমবার পর্যন্ত সাগর থেকে ৪ দিনে প্রায় ২শ মেট্রিক টন মাছ এসেছে এ ঘাটে। আর মঙ্গলবার একদিনে আসা মাছের পরিমাণ একশ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর মাছের পরিমাণ বেশি এবং সাইজও ভালো। একই তথ্য জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বিপ্লব এবং সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান। ড. শফিকুর রহমান গতকাল ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে জানান, সাগর থেকে এ পর্যন্ত আসা ইলিশের মধ্যে ২ কেজি ২শ গ্রাম ওজনের ইলিশও পাওয়া গেছে, যা নিষেধাজ্ঞার ফসল বলে মনে করছেন তারা।কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. খালেকুজ্জামান বিপ্লবও মনে করেন, প্রজননকালীন ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বঙ্গোপসাগর মৎস্যভান্ডারে পরিণত হয়েছে। ফলে গত দুই বছর ধরে সাগরে বড় বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। আগে যা কল্পনাও করা যেত না।কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৭ হাজার মাছ ধরার বোট রয়েছে। এসব ট্রলারের লক্ষাধিক জেলে এখন সাগরে আসা-যাওয়া করছে। কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট ছাড়াও শহরের কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাট এবং জেলার অন্যান্য উপকূলীয় ঘাট থেকেও সাগরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে মাছ ধরার বোটগুলো। ফলে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে পল্লীগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ।জেলা বোট মালিক সমিতি জানায়, সাগরে মাছ ধরার বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলেও মাছ পাওয়া সাপেক্ষে ৩/৪ দিনের মধ্যেও ফিরে আসে। তবে বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায় এবং দিনে দিনে ফিরে আসে। আর এসব জেলে বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের)মাছ বলা হয়।
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any link in the comment Box