Like us on Facebook

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

Saturday, November 21, 2020

মাধ্যমিকে আর থাকছে না বিভাগ-বিভাজন

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, নতুন কারিকুলাম অনুসারে নতুন বই ছাপানো হবে। এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রথম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নতুন কারিকুলাম ও বই পাবে। যথাসময়ে বই পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়ে এ স্তরের নতুন কারিকুলাম চূড়ান্ত হবে ২০২০ সালে মাঝামাঝি সময়ে। ২০২২ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং ২০২৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইও পরিবর্তন করা হবে।

প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত কারিকুলামে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এ পরিবর্তনে নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বিভাজন আর থাকছে না। আগামীতে নবম-দশম শ্রেণিতে সবাইকে একই কারিকুলামের একই পাঠ্যবই পড়তে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাগ বিভাজন শুরু হবে। এ লক্ষ্যে কারিকুলাম উন্নয়ন সংশ্নিষ্টদের নিয়ে দফায় দফায় কর্মশালা করে সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কারিকুলাম পরিবর্তনের পাশাপাশি পাঠ্যবইও বদলে যাবে। এবারই প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলাম একসঙ্গে পরিবর্তন ও সমন্বয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ২০২২ সালে সপ্তম শ্রেণি, নবম ও একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই পরিবর্তন হবে। আর ২০২৩ সালে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা হবে।
ফাইল ছবি
কারিকুলামে বড় পরিবর্তনের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি থেকে বিভাগ তুলে দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা হবে। ফলে এ স্তরে বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য নামে কোনো বিষয় থাকবে না। সবাইকে সব বিষয় পড়তে হবে বা বিষয় পছন্দের সুযোগ থাকবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে। সংশ্নিষ্টদের ধারণা, দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর সব বিষয়ে সমান ধারণা থাকা উচিত। নবম শ্রেণির বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ উঠিয়ে দেওয়া হলে ২০২৩ সাল থেকেই নতুন কারিকুলাম ও বই পাবে।

কারিকুলামে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা ও নম্বর কমিয়ে আনা। ফলে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পরিমাণ বাড়ানো হবে। শ্রেণিকক্ষে সব বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নে ২০ নম্বর রাখা হবে। এতে পাবলিক পরীক্ষার নম্বর কমে যাবে। বর্তমানে গার্হস্থ্য অর্থনীতি/কৃষি পরীক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। নতুন কারিকুলামে যুক্ত হবে সব বিষয়।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান সমকালকে বলেন, 'নতুন কারিকুলাম নিয়ে কাজ চলছে। সে অনুযায়ী বইও পরিবর্তন করা হবে।'

জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরেও বর্তমান চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কারিকুলামে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক এমন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাঠ্যবইয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থা, জঙ্গিবাদ, নিরাপত্তা বিষয়গুলো যুক্ত করা হবে। শ্রেণিকক্ষে পড়ার পাশাপাশি কাজটি করে দেখানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। যুক্ত থাকবে খেলাধুলাও।

এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান সমকালকে বলেন, 'আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্য পৃথক সময়ে কারিকুলাম পরিবর্তন হওয়ার কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলামে কোনো সমন্বয় থাকত না। এবারই একসঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কারিকুলাম পরিমার্জন করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হবে না।'

তিনি বলেন, প্রাথমিক স্তরের কারিকুলামের ক্ষেত্রে সময়ের চাহিদাগুলো বিবেচনায় আনা হচ্ছে। বইয়ে কাগজে নৌকার ছবি থাকলে শিক্ষার্থীদের তা শ্রেণিকক্ষেই বানিয়ে দেখাতে হবে। এতে শিশু শিক্ষার্থীর কাজের দক্ষতা বাড়বে।

জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের নিয়ে ওই বছরের ২৫ ও ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারে দু'দিনের আবাসিক কর্মশালা হয়। এতে শিক্ষাবিদরা বেশকিছু সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে কয়েকটি সাব-কমিটিও গঠন করা হয়। শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা সাব-কমিটি ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ৮ দফা প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষাক্রম বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অনুসারে তিন গুচ্ছে ভাগ করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়। 'ক' গুচ্ছে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। 'খ' গুচ্ছে বিজ্ঞান, সমাজ পাঠ (ইতিহাস পৌরনীতি ও ভূগোল)। 'ক' ও 'খ' গুচ্ছ বাধ্যতামূলক। আর 'গ' গুচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি, চারু-কারুকলা, শরীরচর্চা ও খেলাখুলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, কৃষি ও গার্হস্থ্য, নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি। এ ছাড়া 'ঘ' গুচ্ছে প্রকৌশল প্রযুক্তি (বিদ্যুৎ, যন্ত্র, কাঠ, ধাতু ইত্যাদির ব্যবহারিক জ্ঞান ও প্রয়োগ) যুক্ত করার মত দেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষাবিদরা 'গ' গুচ্ছের বিষয়গুলোর জন্য কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নিয়ে বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেন। আর শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কর্ম ও পেশা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নবম ও দশম শ্রেণিতে আগের শ্রেণির গুচ্ছের সঙ্গে 'ঘ' গুচ্ছ যুক্ত করার কথা বলেন। এই গুচ্ছে রয়েছে পদার্থ, রসায়ন, জৈববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, হিসাব, বিপণন, ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি। 'ঘ' গুচ্ছ থেকে যে কোনো দুটি বিষয় শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে নিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে 'ঘ' গুচ্ছ থেকে ঐচ্ছিকভাবে আরও একটি বিষয় নিতে পারবে। তবে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষাবিদরা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পাঁচটি বিষয় বাধ্যতামূলক ও দুটি ঐচ্ছিক বিষয় রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। ধর্ম বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা না নিলে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণি ক্ষুব্ধ হতে পারেন। সে বিবেচনায় ধর্ম ও তথ্যপ্রযুক্তি বাধ্যতামূলক বিষয় করার মত দেন তারা। এ ক্ষেত্রে ঐচ্ছিক বিষয় একটি কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। নবম-দশম শ্রেণিতে পাঁচটি বাধ্যতামূলক বিষয় ছাড়া 'গ' গুচ্ছ থেকে দুটি ও 'ঘ' গুচ্ছ থেকে দুটি বা তিনটি বিষয় নিতে হবে। ফলে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪টি থেকে চারটি বিষয় কম যাবে। অর্থাৎ ঐচ্ছিক বিষয়সহ মোট ১০টি বিষয়ের পাবলিক পরীক্ষা হবে।
Share:

0 comments:

Post a Comment

Please do not enter any link in the comment Box

Blog Archive

Definition List

Unordered List

Support

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner